জন্ম: (২৪ জুন ১৯৮৭) একজন আর্জেন্টাইন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড় যিনি ফরাসী পেশাদার লিগের শীর্ষস্তর লিগ ১ এর ক্লাব পারি সাঁ-জেরমাঁ এবং আর্জেন্টিনার জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে একজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে খেলেন। তিনি বর্তমানে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৫ই আগস্ট, ২০২১ তারিখে বার্সেলোনা ঘোষণা করে যে লিওনেল মেসি ক্লাবের সাথে চুক্তি নবায়ন করবেন না। ক্লাবটি মেসির চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে স্প্যানিশ লিগার নিয়মকানুন দ্বারা সৃষ্ট আর্থিক এবং কাঠামোগত বাধার কথা উল্লেখ করেছে।[৪] মেসি প্রায়শই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়দের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচিত।
লিওনেল মেসি
Lionel Messi
২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে মেসি
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
লিওনেল আন্দ্রেস মেসি
জন্ম
২৪ জুন ১৯৮৭ (বয়স ৩৬)[১]
জন্ম স্থান
রোসারিও,আর্জেন্টিনা[২]
উচ্চতা
১.৭০ মিটার (৫ ফুট ৭ ইঞ্চি)[৩]
মাঠে অবস্থান
আক্রমণভাগের খেলোয়াড়
ক্লাবের তথ্য
বর্তমান দল
প্যারিস সেন্ট জার্মেই
জার্সি নম্বর
৩০
যুব পর্যায়
১৯৯২–১৯৯৫
গ্রান্দোলি
১৯৯৫–২০০০
নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ
২০০০–২০০৩
বার্সেলোনা
জ্যেষ্ঠ পর্যায়*
বছর
দল
ম্যাচ
(গোল)
২০০৩–২০০৪
বার্সেলোনা সি
১০
(৫)
২০০৪–২০০৫
বার্সেলোনা বি
২২
(৬)
২০০৪–২০২১
বার্সেলোনা
৫২০
(৪৭৪)
২০২১–
প্যারিস সেন্ট জার্মেই
৪১
(১৪)
জাতীয় দল‡
২০০৪–২০০৫
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০
১৮
(১৪)
২০০৭–২০০৮
আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২৩
৫
(২)
২০০৫–
আর্জেন্টিনা
১৭৪
(১০২)
অর্জন ও সম্মাননা
ফুটবল (পুরুষ)
আর্জেন্টিনা-এর প্রতিনিধিত্বকারী
ফিফা বিশ্বকাপ
বিজয়ী ২০২২ কাতার
রানার-আপ ২০১৪ ব্রাজিল
কোপা আমেরিকা
বিজয়ী ২০২১ ব্রাজিল
রানার-আপ ২০০৭ ভেনেজুয়েলা
রানার-আপ ২০১৫ চিলি
রানার-আপ ২০১৬ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
তৃতীয় স্থান ২০১৯ ব্রাজিল
কনমেবল–উয়েফা কাপ অফ চ্যাম্পিয়ন্স
বিজয়ী ২০২২ ইংল্যান্ড
অলিম্পিক
স্বর্ণ পদক – প্রথম স্থান ২০০৮ বেইজিং
ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ
বিজয়ী ২০০৫ নেদারল্যান্ডস
দক্ষিণ আমেরিকা অনূর্ধ্ব–২০ চ্যাম্পিয়নশিপ
তৃতীয় স্থান ২০০৫ কলম্বিয়া
স্বাক্ষর
লিওনেল মেসির স্বাক্ষর
* শুধুমাত্র ঘরোয়া লিগে ক্লাবের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা গণনা করা হয়েছে এবং ০৩:৪৬, ২৬ আগস্ট ২০২২ (ইউটিসি) তারিখ অনুযায়ী সকল তথ্য সঠিক।
‡ জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ ও গোলসংখ্যা ০৬:৪৬, ৪ ডিসেম্বর ২০২২ (ইউটিসি) তারিখ অনুযায়ী সঠিক।
লিওনেল মেসি টানা চারবারসহ মোট সাতবার ব্যালন ডি’অর জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন, যা ফুটবলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর পাশাপাশি তিনি সর্বোচ্চ ছয়বার ইউরোপীয় সোনালী জুতো জয়েরও কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। তাঁর পেশাদার ফুটবল জীবনের পুরোটাই কেটেছে বার্সেলোনায়। যেখানে তিনি ১০টি লা লিগা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং ৬টি কোপা দেল রেসহ মোট ৩৩টি শিরোপা জয় করেছেন, যা বার্সেলোনার ইতিহাসে কোন খেলোয়াড়ের পক্ষে সর্বোচ্চ। এছাড়াও একজন অসাধারণ গোলদাতা হিসেবে মেসির দখলে রয়েছে লা লিগায় সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল (৪৪০), লা লিগা ও ইউরোপের যেকোনো লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৫০), ইউরোপে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৭৩), এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ গোল (৯১), এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল (২৬) এবং লা লিগা (৩৪) ও চ্যাম্পিয়নস লিগে (৮) সর্বোচ্চ হ্যাট্রিকের কৃতিত্ব। পাশাপাশি মেসি একজন সৃষ্টিশীল প্লেমেকার হিসেবেও পরিচিত। তিনি লা লিগা (১৮৩) এবং কোপা আমেরিকার (১২) ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলে সহায়তাকারীর কৃতিত্বেরও মালিক। জাতীয় দল এবং ক্লাবের হয়ে তিনি ৭০০ এর অধিক পেশাদার গোল করেছেন।
মধ্য আর্জেন্টিনায় জন্ম এবং বেড়ে ওঠা মেসি ছোট বেলায় গ্রোথ হরমোন সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হন। সেই সময় আর্জেন্টিনার কোন ক্লাবের পক্ষে তাঁর চিকিৎসার খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু ক্লাব বার্সেলোনা তাঁর চিকিৎসার খরচ বহনের দায়িত্ব নেয়ায় ১৩ বছর বয়সে তিনি তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন এবং স্পেনে পাড়ি জমান। বার্সেলোনার যুব প্রকল্পে তিনি নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেখাতে শুরু করেন এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার মূল দলে তাঁর অভিষেক হয়। পেশাদার ফুটবল জীবনের শুরুতে ইনজুরি-প্রবণ হলেও, ২০০৭ সাল নাগাদ তিনি নিজেকে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেন। তিনি ২০০৭ সালের ব্যালন ডি’অর পুরস্কারে তৃতীয় ও ফিফা বর্ষসেরা পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। পরবর্তী বছর তিনি উভয় পুরস্কারে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন এবং এর পরের বছর তিনি প্রথমবারের মত উভয় পুরস্কার জয় করেন। ২০০৮-০৯ মৌসুমে তিনি বার্সেলোনার মূল দলের একজন নিয়মিত খেলোয়াড়ে পরিণত হন। সে মৌসুমেই তিনি বার্সেলোনাকে প্রথমবারের মত এবং প্রথম স্পেনীয় ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন।
মেসির সেরা মৌসুম নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পরিসংখ্যানগত দিক দিয়ে তাঁর সেরা মৌসুম ছিল ২০১১-১২। সেই মৌসুমে তিনি লা লিগা এবং ইউরোপীয় ফুটবলের ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল করার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাঁর প্রতিভার আরেকটি ঝলক দেখা যায় ২০১৪-১৫ মৌসুেম, যখন তিনি লা লিগা ও উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতার কৃতিত্ব অর্জন করেন এবং বার্সেলোনাকে ঐতিহাসিক দ্বিতীয় ট্রেবল জয়ে সাহায্য করেন। ২০১৮ সালের আগস্টে মেসি বার্সেলোনার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।