চট্টগ্রাম প্রতিনিধি :বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এবার প্রবেশ করলো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে । ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম তথা পুরো দেশে সৃষ্টি হল যোগাযোগের নতুন মাইলফলক ।
গত কাল (আজ )মঙ্গবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১১টা ৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয় সহ আরও দুটি প্রকল্প জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গণভবন থেকে ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী-সিডিএ ফ্লাইওভার’ নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়টি উদ্বোধন করেন।
অন্য দুইটি প্রকল্প হল, নগরীর সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে শাহ আমানত ব্ৰীজ সংযোগ সড়ক পর্যন্ত নির্মিত বাকলিয়া এক্সেস রোড ও চট্টগ্রাম নগরীর যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য বায়েজিদ বোস্তামি থেকে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট পর্যন্ত নির্মিত বায়েজিদ লিংক রোড।
নগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে এই এক্সপ্রেসওয়ে ও এই দুই সড়ক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পন্ন হলেও আজ থেকে এক্সপ্রেসওয়ের উপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করবে না।
সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। চার লেনের এই ফ্লাইওভারটির নামকরণ করা হয়েছে ‘মেয়র মহিউদ্দীন চৌধুরী–সিডিএ ফ্লাইওভার’। এটি নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গার কাঠগড় পর্যন্ত বিস্তৃত।
সূত্র মোতে জানা যায় , ফ্লাইওভারের কাঠগড় থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারেরও বেশি অংশের চার লেনের পিচ ঢালাই প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক করে মহান বিজয় দিবসের দিন সকালে এই অংশ যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। তবে কোনো কারণে সেটি সম্ভব না হলে ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনই এটি খুলে দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। প্রাথমিকভাবে এখান থেকে কোনো টোল নেয়া হবে না। সবগুলো লুপ এবং র্যাম্প নির্মিত হয়ে ফ্লাইওভার পুরোদমে চালু হওয়ার পর টোল আরোপ করা হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, উল্লেখিত ১৫ কিলোমিটার অংশে তৈরি হয়ে গেছে গাড়ি চলাচলের রাস্তা। তবে ডিভাইডার এবং সাইডওয়ালসহ কিছু কিছু কাজ বাকি রয়েছে। এসব কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য রাতে দিনে শত শত শ্রমিক কর্মচারী এবং প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। আগামী দিনকয়েকের মধ্যে এসব কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বলা হয়েছে, সিভিল কাজ খুবই টেকনিক্যাল। একেবারে দিনক্ষণ ঠিকঠাক করে এগুলো আগাম বলা কঠিন। তবে সবমিলিয়ে মাস খানেকের মধ্যে কাজগুলো শেষ হবে বলে আমরা আশা করছি।এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করলো বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগের নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হল।
নিরাপত্তার দিকটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুরো ফ্লাইওভার সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আসার কাজ করা হচ্ছে। এগুলো শেষ করার পর প্রাথমিকভাবে টাইগারপাস থেকে কাঠগড় পর্যন্ত ফ্লাইওভার চালু করে দেয়া হবে। অর্থাৎ টাইগারপাস–কাঠগড় যাতায়ত করা যাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেওসয়েতে সর্বমোট ১৪টি র্যাম্প এবং লুপ থাকবে। যেগুলো নির্মিত হতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এর আগে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে লালখান বাজারে আক্তারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হবে। জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের পাশে দুইটি ফ্লাইওভারকে যুক্ত করার কাজ চলছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বাংলাদেশের খবরকে বলেন , ‘এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও আরও দুটি প্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে। এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। আর কর্ণফুলী নদীর তীরে কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত যে সড়ক নির্মিত হচ্ছে, সেটির নির্মাণকাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের মানুষ বুঝতে পারবে, প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে কতটা পরিবর্তন এনে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সবগুলো র্যাম্প এবং লুপ নির্মাণের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পুরোদমে চালু হলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে টোল আরোপ করা হবে। এর উপর দিয়ে ঠিক কখন যান চলাচল শুরু হবে তার দিনক্ষণ ঠিক হয়নি বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। অচিরেই এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে বলেও তিনি জানান।
সিডিএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরীর যানজট নিরসনে ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির পিলার পাইলিংকাজের উদ্বোধন করেন। শুরুতে ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশের অ্যালাইনমেন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে জটিলতা তৈরি হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। পরে দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। শুরুতেই প্রকল্পের অধীনে ৯টি জংশনে ২৪টি র্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) নির্মাণের কথা ছিল। পরে প্রকল্প সংশোধন করে ২৪টির পরিবর্তে ১২টি র্যাম্প নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সিডিএ। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুইটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি র্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া উড়াল মহাসড়কে ২ হাজার ৫০০ এলইডি লাইন স্থাপনের কথা রয়েছে। সব মিলিয়ে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকায়।