ডা. মোহাম্মদ নিজাম মোর্শেদ চৌধুরী (চিকিৎসক, শিক্ষানরাগী, সমাজকর্মী)
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের শিক্ষা লাভের জন্য সু-স্বাস্থ্য, অত্যন্ত জরুরি। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ একজন শিশু শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি, যার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩২ শতাংশ। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই গ্রামে বাস করে। গ্রাম থেকে অনেকেই, বিশেষ করে তরুণ বয়সীরা শহরাঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগ এবং কাজের সুবিধা উপভোগ করার আশায় শহরে আসে।
বাংলাদেশের প্রায় ৬৬ শতাংশ মানুষ গ্রাম থেকে শহরমুখী হয়। অন্যদিকে, উচ্চ চাকরির সুযোগ, উচ্চ মজুরি, উন্নত জীবিকা, উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষার সুবিধা গ্রামের তুলনায় শহরে পর্যাপ্ত ।
অন্যদিকে গ্রাম বা শহরের বস্তি গুলোতে শিশু শিক্ষাথীরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে ঝড়ে পরে বেশি । প্রাথমিক স্তরের শিশুদের ঝরে পড়া রোধে এবং শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করতে জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষায় দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করা জরুরি এবং পিছিয়ে পড়া এলাকাসহ গ্রামীণ সব বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবার ব্যবস্থা চালু করা দরকার ।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, শহরাঞ্চলে স্কুলগামী শিশুর হার জাতীয় হারের ৮৫.০ শতাংশ। এর মধ্যে প্রাথমিক স্তরে ভর্তি হওয়া ছেলেদের হার ৮২.৫ শতাংশ এবং মেয়েদের হার ৮৭.০ শতাংশ । শিক্ষা পরিসংখ্যান ২০২১ এর তথ্য অনুসারে, মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি স্কুলের সংখ্যা ৬৮৪টি যেখানে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ৯ হাজার ৪৫৮ জন। অপরদিকে প্রাইভেট স্কুলের সংখ্যা ২০ হাজার দুইশত ৭৬টি। আর প্রাইভেট স্কুলে ছাত্রছাত্রী আছে মোট ৯৫ লক্ষ ৮০ হাজার পাঁচ শত ৬৪ জন
বেশকিছু পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে, মানুষের খাদ্যের সাধারণ পুষ্টি এবং খাদ্য উপাদান উভয়ই মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ওপর প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতার পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের মধ্যে রয়েছে—মস্তিষ্কের বিকাশ, মস্তিষ্কে সংকেত নেটওয়ার্ক, নিউরোট্রান্সমিটার, জ্ঞান এবং স্মৃতি ।
তার মানে, ক্লাসের পড়ায় মনোযোগী হতে গেলেও খাবার দরকার। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় অনাহারী শিশুর মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছাতে দেরি হয় বলে সে ক্লাসে অমনোযোগী থাকে। এক্ষেত্রে যদি সরকারি বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোয়ও মিট-ডে মিলের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে ভালো হয়।কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিশুকাল থেকেই স্বাস্থ্য সচেতন ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃমি নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন এ-প্লাস ক্যাম্পেইন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা দরকার ।
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপ্তাহব্যাপী খুুদে ডাক্তার কার্যক্রম ও শুরু করা যেতে পারে । প্রতিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি ক্লাস থেকে ১২ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্ষুদে ডাক্তারের দল গঠন করা যেতে পারে । সেই ক্ষেত্রে অ্যাপ্রোন, ওজন মিটার, উচ্চতা মাপার স্কেল বা ফিতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট) বিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করা উচিৎ । ক্ষুদে ডাক্তারদের মাধ্যমে রোগ জীবাণু সম্পর্কে ধারণা ও ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা হাতে-কলমে শিক্ষা পাবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
এই স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মসূচির কিন্ডারগার্টেন, প্রাথমিক ১ম থেকে থেকে ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘খুদে ডাক্তারের দল’ গঠন করা দরকার । খুদে ডাক্তারের দল সহপাঠী শিক্ষার্থীদের ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি, দৃষ্টিশক্তির ত্রুটিসহ নানা বিষয় গাইড শিক্ষকের নজরে আনতে পারবে।এতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা সহজ যেমন হবে তেমনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সচেতনা বাড়বে।